কিছু গল্প কিছু রহস্য 1


বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে প্রমাণিত হয়েছে, কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক- সেই খবর বোধকরি খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেনি । এটা ঠিক, পৃথিবীর সবচাইতে অভিশপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে বারমুডা টায়াঙ্গল বা ত্রিভুজকে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়। কারণ যাবৎ এখানে যতো রহস্যময় কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটার কথা শোনা গিয়েছে, অন্য  কোথাও এতো বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজবারমুডা ত্রিভুজের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। মোট তিনটি প্রান্ত দ্বারা অঞ্চলটি সীমাবদ্ধ বলে এর নামকরণ করা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। অঞ্চলটি যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুদা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এলাকায় কমপে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা িশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পাচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিলো, ‘সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে উদ্ধার কর। বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম অঞ্চলের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এলকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নিএর রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন   সময়ে বেতার তরঙ্গের অনুপস্থিতির কথা বলা হলেও এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। মার্কিন সামরিক বাহিনী এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। কারণ থিবীর কোনো এলাকায় স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গের প্রবাহ হারিয়ে যেতে বা নিশ্চিহ্ন হতে পারে না। তা হলে সারা পৃথিবীর বেতার সিস্টেমই ধ্বংস হয়ে যাবেতবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যএকটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে। 

 

মমি

 অদ্ভুত সেই মমির কাণ্ড.....!!! (টাইটানিকের অভিশাপ.....!!!)

অবিশ্বাস্য বা কাকতালীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। তেমনই বেশ কিছু ঘটনা আছে সমাধি সৌধ মমিকে কেন্দ্র করে। মিসরীয় রাজা-রানীরা বিশ্বাস করত মৃত্যুর পর আত্মা পুনর্জীবিত হয়ে পুনরায় দেহে ফিরে আসে। তাই তাদের মৃত্যুর পর মৃতদেহ মমি করে কফিনে রেখে দেওয়া হতো। এই বিশ্বাসের কারণেই মিশরে গড়ে উঠেছিল আশ্চর্যজনক সব পিরামিড। মমি আজো মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর বিষয়। মমি-কে নিয়ে আজো মানুষের মনে রয়েছে হাজারো বিস্ময়। মমিকে নিয়ে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনাও রয়েছে। আসুন তার মধ্য থেকে কয়েকটা ঘটনা আমরা জানি।
এক সময় মিশরে দুর্দান্ত প্রতাপশালী ফারাওদের বসবাস ছিল। যাদের আমরা বলি ফেরাউন জাতি। ফারাওদের মধ্যে তুতেম খামেনের নাম খুবই উল্লেখযোগ্য। তিনি খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলন। মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ যথারীতি একটি সোনার কফিনে মুড়ে বহু মূল্যবান ধনরত্নসহ মমি করে রেখে দেওয়া হয়। ১৮২২ সালের ২৬ নভেম্বর, প্রত্মতত্ত্ববীদ মি. হাওয়ার্ড, তার পার্টনার অর্থ জোগানদার কর্নারভান আবিষ্কার করেন ধনরত্ন, মণিমুক্তা খচিত ফারাও তুতেনের কফিন। সেটা ছিল পৃথিবী কাঁপানো এক ঘটনা। কিন্তু আসল ঘটনার উদ্ভব ঘটে এরপর থেকে। তুতেন খামেনের গুপ্তধন আবিষ্কারের মাসের মাথায় অর্থ জোগানদার কর্নারভানের মৃত্যু হয়। কিভাবে বা কেন কর্নারভানের মৃত্যু হয় তা সম্পূর্ণ অজানা। সে কি কারণে মারা যায় ডাক্তাররাও তা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন। তার মৃত্যু আরেক বিস্ময়কর ঘটনার সৃষ্টি করে। যে মুহূর্তে তিনি মারা যান তখন মিশরের রাজধানী কায়রোর সবগুলো বাতি হঠাৎ নিভে যায়। শুধু তাই নয়, লন্ডনে তার পোষা কুকুরটিও একই সময় ছটফট করতে করতে মারা যায়। এরপর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, মমিটির গায়যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র ছিল, কর্নারভানের শরীরও ঠিক সে রকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র হয়ে গিয়ে ছিল। কিন্তু এর প্রধান আবিষ্কারক মি. হাওয়ার্ড ৭০ বছর বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকে মিসরে আমেনরা নামে এক রাজ কুমারী মারা যান। তাকে যথা নিয়মে মমি করে সমাধিস্থ করা হয়। অনেক বছর পর ঊন বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তার মমিটি কেনার জন্য চারজন ইংরেজ মিসরে আসেন এবং তারা রাজকুমারী আমেনরার মমিটি ক্রয় করেন। কিন্তু এর জন্য তাদের নিদারুণ দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়। মমিটি কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় চারজনের মধ্যে একজন মরুভূমিতে ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যান। তারপর ইংল্যান্ডে ফেরার পর তাদের একজন দেখেন তার সব সম্পত্তি কেউ একজন আত্মসাৎ করেছে। অপরজন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার চাকরি চলে যায়। মমিটির পরবর্তীতে স্থান হয় ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। কিন্তু যেই একবার মমিটিকে স্পর্শ করেছে তাকেই কোনও না কোনও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এমন কি এক দর্শনার্থী যে কিনা কাপড় দিয়ে মমিটির মুখ পরিষ্কার করেছিল এক সপ্তাহের মধ্যে তার ছেলে মারা যায়। আর একবার এক ফটো সাংবাদিক মমিটির ছবি তুলেছিলেন। ছবিটি ডেভেলপ করে তিনি দেখেন রাজকুমারীর মুখের বদলে এক ভৎস বিকৃত মুখ। সে রাতেই তিনি আত্মহত্যা করেন। এরপর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ মমিটির প্রদর্শন বন্ধ করে দেন এবং এটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরের দিনই কর্মকর্তারা দেখেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার লাশ পড়ে আছে টেবিলের ওপর। কিন্তু মানুষের শখ চিরন্তন। এত কিছুর পরও এক আমেরিকান পর্যটক মমিটি ক্রয় করেন এরপর স্বদেশে ফেরার জন্য নিউইয়র্ক গামী একটি জাহাজের কেবিন ভাড়া নেন। আর যাত্রাই ছিল সেই জাহাজটির প্রথম শেষ যাত্রা। কারণ যাত্রাপথেই জাহাজটি ডুবে যায় এবং এটিই ছিল বিশ্ব বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক.....!! যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরে গড়ে উঠেছিল এক অসাধারণ সভ্যতা। নীল নদের তীরে সভ্যতায় গড়ে উঠেছিল সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন রহস্যমণ্ডিত পিরামিড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এত প্রাচীন হলেও সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র পিরামিডই এখনপৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজবংশের রাজাদের মমি সমাধিস্থ করা হতো পিরামিডের ভিতরের গোপন কক্ষে। আর রাজার সঙ্গে সঙ্গে সমাধিস্থ করা হতো প্রচুর ধনরত্ন, দাস-দাসী। আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছেও পিরামিড এক অজানা রহস্য। যার কাঠামো আধুনিক বিজ্ঞানের সব শাখায়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্কিটেকচারাল হিসেবে ধরনের কাঠামো সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং স্থায়ী হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেখা গেছে যে, পিরাপিড আসলে একটা রেশনাল স্ট্রাকচার। বিশাল সব পাথর কেমন করে শত শত ফুট ওপরে তোলা হয়েছিল জানে না কেউ। জানে না কেমন করে কাঁটা হয়েছিল পাথরগুলো। কারণ পাথরগুলোর ধার এতই মসৃণ যে, অতি উন্নত যন্ত্র ছাড়া যেটা সম্ভব নয়। এখানেই শেষ নয়, মৃতদেহকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমি করে রাখত। কাজে তারা বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখনো ধরতে পারেননি তাদের সেই পদ্ধতিপিরামিডের গঠনশৈলীর প্রভাব পৃথিবীব্যাপী। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেকার মানুষের তুলনায় অস্বাভাবিক রকম বড় পাথরগুলো কিভাবে এত উপরে তোলা হয়েছিল, আধুনিক যুগের মানুষের কাছে এটা খুব বড় একটা রহস্য। সাধারণ রাস্তার উপর দিয়ে কোনো গাড়ি বা যন্ত্র ছাড়া এত বড় পাথর টেনে আনা কত অসাধ্য তা আমরা সবাই কল্পনা করতে পারি। কিন্তু মিসরের মরুভূমির বালুর উপর দিয়ে এত বড় পাথর টেনে আনা কত অসাধ্য তা আমাদের কল্পনার বাইরে। কেউ কখনো বালির উপর দিয়ে সাইকেল চালাতে গেলেই দেখা যায় বালি কিভাবে তার উপর দিয়ে চলমান বস্তুকে টেনে ধরে। তখনকার সময়ে মিসরে এমন কোনো প্রযুক্তি ছিল না যার দ্বার তারা বিশাল বিশাল স্থাপনাগুলো তৈরি করতে পারে। আর কারণেই এখনো অপার রহস্যের নাম পিরামিড।
মিসরের পিরামিডই হলো সবচেয়ে বিস্ময় জাগানিয়া স্থাপত্যগুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু শুধু মিসর নয় বরং পৃথিবীর আরো নানা স্থানে রয়েছে আরো অনেক পিরামিড। ঠিক কি কারণে এবং কোনো যান্ত্রিক বিধা ছাড়াই কীভাবে নির্মিত হয়েছিল এই পিরামিডগুলো? জানি, রকম নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করেছে আপনার মনে কিন্তু হয়তো জানা হয়নি তেমন কিছুই।
মিসরে প্রচুর পিরামিড দেখতে পাওয়া যায়। তবে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে প্রাচীন গির্জার খুফুর পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তমাশ্চর্যের একটি। খ্রিস্ট পু. ২৫৬০ সালে ফারাও রাজা খুফু নিজে পিরামিডটি তৈরি করেন। এই পিরামিড নিয়ে কয়েকটি মজার ব্যাপার রয়েছে। চার হাজার চারশত বছর ধরে এটিই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য কর্ম। ১৮৮৯ আইফেল টাওয়ার নির্মাণের পর এটি তার গৌরব হারায়। খুফুর িরামিডের পাথরের গায়ে মূল্যবান লাইমস্টোন প্লাস্টার করা ছিল। পরে অন্য পিরামিডগুলো নির্মাণের সময়ে অন্য রাজারা এখান থেকে লাইমস্টোন নিয়ে নিজের সমাধিসৌধে লাগাতে শুরু করে। এই পিরামিডটিতে তিনটি কক্ষ রয়েছে। আর এই কক্ষগুলোতে ঢোকার জন্য পেরোতে হতো অনেকগুলো গোলক াঁধা। ইতিহাসের জনক হেরোডেটাসের মতে, এই পিরামিড তৈরিতে লাখ লোকের ২০ বছর লেগেছিল। একটা সময়ে খুফুর পিরামিডের শীর্ষে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এখন আর দেওয়া হয় না। কেননা পর্যটকের এবং পিরামিড দুটোরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে এতে।খুফুর পিরামিড সম্পর্কে বলে গেছেন দার্শনিক হেরোডেটাস। কিন্তু তিনি যে মতবাদ দিয়ে গেছেন তা পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হয়। কেননা আধুনিক প্রত্নতাত্তি্বকরা জানাচ্ছেন, খুফু পিরামিডটি তৈরিতে মূলত নীলনদের তীরবর্তী মানুষদের কাজে লাগিয়েছিলেন। সময় ২০ বছরের চেয়ে অনেক কম লেগেিছল। তখনকার যুগে মিসরের লোকেরা ফারাও রাজাকে নিজেদের দেবতা মনে করত এবং মৃত্যুর পর তাদের পরবর্তী জীবনে চলার জন্য তার সমাধিতে তার মমিকৃত মৃতদেহের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পদও দিয়ে দিত। পরে ফারাও রাজাদের সমাধিকে নিরাপদ করে দেয়ার জন্য এর উপর তৈরি করা হত পিরামিড আকৃতির কাঠামো। এখন পর্যন্ত গবেষণা অনুসারে ১৫৩৯ বিসি থেকে ১০৭৫ বিসি পর্যন্ত পিরামিডের মতো করে বা নির্ভেজাল লাইমস্টোন কেটে প্রায় ৬৩টি সমাধি তৈরি করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগই অনেক দীর্ঘ এবং ক্রমে নিম্নগামী অসংখ্য ছোটবড় করিডরের জটিল বিন্যাসের মাধ্যমে অবশেষে গিয়ে ফারাওদের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। সমাধিগুলোতে নানা রকমের প্রতীক, দেয়ালে খোদাইকৃত ছবি, অন্যজগতে ভ্রমণের তথ্য এবং নতুন জীবনের প্রয়োজনীয় সব উপাদান দেওয়া থাকত। ধন-সম্পত্তি তো থাকতই। এর রুমগুলোর একদম কেন্দ্রে থাকত স্বর্ণমণ্ডিত ফারাও রাজাদের শবধার। রুমগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে সিল করে দেওয়া হতো এবং সমাধির মূল্যবান দ্রব্য রক্ষা করার জন্য তখনকার মিসরের শ্রেষ্ঠ আর্কিটেকরা চোরদের ধোঁকা দেওয়ার উপযোগী ডিজাইন করার দায়িত্ব পেত। মাঝে মাঝে প্যাসেইজ রাস্তাগুলো বন্ধ করার জন্য বিশাল এবং মজবুত গ্রানাইট প্লাগ ব্যবহার করা হতো। চোরদের দমন করার জন্য নকল দরজা, গোপন রুম ইত্যাদি অসংখ্য ব্যবস্থার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাধির প্রবেশ প্রথে কোনো অভিশাপ দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এসব পূর্ব সাবধানগুলোর বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছিল। প্রাচীন যুগের চোর এবং ডাকাতরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ঠিকই সমাধির পথ খুঁজে বের করত এবং ধন-সম্পত্তি আত্মসাৎ করত।
চোরেরা যেমন ধনসম্পদ চুরির আশায় মমি খুঁজে বেড়াত, তেমনি গুপ্তধনের আশায় গবেষকরা হন্যে হয়ে সমাধিগুলোতে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মিসরের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য আবিষ্কারের অভিযনগুলো পূর্ণাঙ্গ আঙ্গিকে শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ১৯ শতাব্দীতে এসে ইউরোপীয়রাও গুপ্তধনের সন্ধানে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের হতাশ হতে হয়েছিল, কারণ তারা অনেক গবেষণা করে কোনো সমাধি আবিষ্কার করে দেখত তাদের আগেই কেউ না কেউ গুপ্তধন সরিয়ে নিয়েছে। ১৮ শতাব্দীতেও সমাধিগুলোতে যেকোনো অভিশাপের অস্তিত্ব থাকতে পারে এটা সাধারণ মানুষ জানত না। কিন্তু ১৯ শতকের প্রথম দিকে ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার তার দল তুতেন খামেন নামক একজন ফারাও রাজার সমাধি এবং তাতে প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পত্তি খুঁজে পান। এরপর ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা। তারপর থেকেই সমাধিগুলোতে যে অভিশাপও বিদ্যমান থাকতে পারে তা সবার নজরে আসে। কারণ সমাধিটির প্রবেশপথে খোদিত ছিল একটি অভিশাপ। যা এখন সারা বিশ্বেই তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত


No comments:

Post a Comment